নাটক অহম তমসায়
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সদস্য‘অরিন্দম’ চুয়াডাঙ্গা শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে অবস্থিত একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম। সংস্কৃতি-চর্চাগত মৌলিক ধারণার প্রতি আস্থাশীল কতিপয় সচেতন প্রতিশ্রুতিশীল সংস্কৃতি-কর্মীর আন্তরিক প্রয়াস ও প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ‘বাঙালি সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশ চাই’ এই শ্লোগানকে ধারণ করেই এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ।
শুরু থেকেই অরিন্দম শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যম : নাটক, নৃত্য, সংগীত, সাহিত্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রেখেছে। তবে অরিন্দমের পরিচিতি প্রধানত অভিনয় নৈপুণ্যেভরা নাটক প্রদর্শনের কারণে। বস্তুত চুয়াডাঙ্গা শহরের অভিনয় সচেতন দর্শক অরিন্দম প্রযোজিত নাটকের প্রতি দুর্বল তার সফল মঞ্চায়নের কারণেই। তবে অরিন্দমের বিশিষ্টতা এ কারণেই যে, এই সংগঠনটি নাটককে শুধুমাত্র বিনোদনের শিল্প হিসেবে গণ্য করে না বরং নাটক শ্রেণি সচেতনতার যে অন্যতম শিল্প মাধ্যম এ বিষয়টি মুখ্য হিসেবে ধরে নিয়েই নাটক মঞ্চায়ন করে থাকে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, ফরিদপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, পার্বতীপুর ও ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে সব মিলে অরিন্দমের এ পর্যন্ত ৫৬টি নাটকের সর্বমোট ২৭৭টি দর্শকনন্দিত প্রদর্শনী হয়েছে। অহম তমসায় নাটকটি আমাদের ৫৬-তম প্রযোজনা এবং ৬ষ্ঠ প্রদর্শনী। নাট্যকার আনন জামান ও নির্দেশক শামীম সাগর এর প্রতি রইল আমাদের কৃতজ্ঞতা।
নিরন্তর প্রয়াস ও প্রচেষ্টায় যদি দর্শকগণ অনুপ্রাণিত ও মানবিক জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হন, তবেই অরিন্দম-চুয়াডাঙ্গা’র নাট্যকর্মীরা দর্শকদের ভালবাসায় ধন্য হয়ে নাটক মঞ্চায়নের সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করবে।
গল্প সংক্ষেপ
দিবারাত্র এ আত্মা ঈশ্বরের সকল বিধি লঙ্ঘন করে হতে চেয়েছিল ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এ আত্মার চিত্ত ছিল অভ্রভেদী। পাপসিদ্ধ, অগ্নিগামী এ আত্মা ঐশ্বর্যের দ্রোহে, প্রাণের উন্মাদনায় ঈশ্বরকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিল। এ আত্মা মৃত্যুর পর কৃমি-কীটের বিষলালায় শরীরের পচাগলাকে জীবনের প্রান্তসীমা ভেবেছিল। স্বর্গ-নরককে ভেবেছিল গল্পের কল্পগৃহ। এ আত্মা অভিশাপগ্রস্ত। শাপগ্রস্ত বলে স্বর্গে যাবার অযোগ্য, নরক থেকে বিতাড়িত।
অন্ধকারের গল্প বলতে বলতে আলোর কথা বলার গল্প অহম তমসায়। সমকালের গল্প ‘অহম তমসায়’। এটি বর্তমান বাস্তবতার দলিল। এখানে রূপায়িত হয়েছে বাংলাদেশের ভেঙেপড়া আর্থসামাজিক মনস্তত্ত্ব।
নির্দেশকের কথা
মফস্বলের থিয়েটার রাজধানীর নাট্য দর্শকের করুণার দৃষ্টি চায় না, প্রশংসা আদায় করে নিতে চায় তাদের সফল থিয়েটার প্রদর্শনীর মাধ্যমে। রাজধানীর বাইরে ভালো থিয়েটার হয়, হওয়া সম্ভব। সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সম্ভাবনার জন্ম আদিকাল থেকেই। এই বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজধানীর বাইরে বেশ কিছু প্রযোজনা নির্মাণের সুযোগ ঘটেছে এবং বিশ্বাসটি আরো দৃঢ় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অরিন্দম এর ইচ্ছা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে অহম তমসায় প্রযোজনাটি নির্মাণে।
অন্ধকারের গল্প বলতে বলতে আলোর কথা বলার গল্প অহম তমসায়। অরিন্দম চুয়াডাঙ্গা নাট্যদলকে আমার কৃতজ্ঞতা, আমাকে এমন একটি সুযোগ করে দেবার জন্য। নাট্যকার আনন জামানের প্রতি কৃতজ্ঞতা পা-ুলিপিটি মঞ্চে আনার অনুমতি দেবার জন্য, আর বন্ধু আবদুস সালাম সৈকতের প্রতি কৃতজ্ঞতা এই প্রযোজনাটি তার নাট্যদলে নির্মাণের ক্ষেত্র তৈরি করে দেবার জন্য।
প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এটি একটি সফল প্রযোজনার সহায়ক হবে। দর্শক একটি ভালো প্রযোজনা দেখবেন, এই আশা রইলো।
মঞ্চে :
বৃদ্ধ রোহেল : আব্দুস সালাম সৈকত
যুবক রোহেল : মেহেদী হাসান
আবদেল : আতিকুজ্জামান সবুজ
আদিনুর : আয়ুব হোসেন
রেবতি : নাজমা খাতুন নাজু/সৌম্যজিতা শ্রুতি
পাগলী : বুলবুলি খাতুন
তরফদার তায়েফ : হারুন-অর-রশীদ
জলিল : তুহিন/হিরণ উর রশিদ শান্ত
দোহার/কথাগান : আশরাফুল
কোরাস নৃত্যে : মিনারুল ,তুহিন ,রনি, মোমিন, শাহিন,ওলি, বিপ্লব, ওসমান, মেহেদী, বুলবুলি
নেপথ্যে :
রচনা : আনন জামান
নির্মাণ : শামীম সাগর
নির্মাণ সহকারী : আব্দুস সালাম সৈকত
সেট ডিজাইন : শামীম সাগর
মঞ্চ সজ্জা : সবুজ, সেলিম, বুলবুলি, মেহেদী, আয়ুব
পোশাক ও রূপ সজ্জা : ইউনুস আলী শাওন
আবহ সঙ্গীত : মাসুদ. ওনি,শান্ত
আলো পরিকল্পনা : শামীম সাগর
কোরিও গ্রাফি : শামীম সাগর
আলোক প্রক্ষেপণ : হাসান আলী
সমন্বয়কারী : সেলিমুল হাবীব
প্রযোজনা ব্যবস্থাপনা : আব্দুল মোমিন টিপু ও
বজলুর রহমান শায়ক